23 Nov 2024, 11:19 pm

ঝিনাইদহের জমজ ভাই হানজিলা ও তানজিলার জন্ম-চাকুরী ও অবসর একই সময়ে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

জাফিরুল ইসলাম : একসঙ্গে জন্ম। একসঙ্গে চাকরী। আবার অবসরও একই সঙ্গে। শুনতে অবিশ^াস্য হলেও হানজিলার রহমান ওরফে ঠান্ডু মিয়া ও তানজিলার রহমান ওরফে মন্টু মিয়ার জীবনে এমনই ঘটেছে। তারা যমজ দুই ভাই। জন্মের ব্যবধান মাত্র ১০ মিনিটের। একত্রে বেড়ে ওঠা দুই যমজ ভাই পড়ালেখাও করেছেন একই সঙ্গে। পড়ালেখা শেষে চাকরিও পেয়েছেন একই চিঠিতে। কর্মস্থলেও যোগ দিয়েছেন একই দিনে। অবসরের ক্ষেত্রেও তাই। ঠান্ডু ও মন্টু মিয়ার বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের বানিয়াকান্দর গ্রামে। অবসরের পর দুই ভাই মিলে বাড়িতে মিনি পার্ক তৈরি করেছেন। এখন ওই পার্কের গাছপালা দেখভাল করেন। এই দুই ভাইয়ের দেখা মেলে ঝিনাইদহ শহরের পুরোনো ডিসি কোর্ট এলাকায়। দুই ভাইয়ের চেহারা ও পোশাকে মিল দেখে কথা বলতে গেলে এসব তথ্য জানান তাঁরা। পরে বানিয়াকান্দর গ্রামে দুই ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত ঠান্ডু-মন্টু ফ্যামিলি পার্কে যান এই প্রতিবেদক। এ সময় ঠান্ডু ও মন্টু মিয়া বলেন, ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রয়ারি ১০ মিনিটের ব্যবধানে জন্ম তাঁদের। তাঁদের সবকিছুই যেমন অনেক মিল, জীবনে প্রায় সব কাজই করেছেন একসঙ্গে। বানিয়াকান্দর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঠান্ডু ও মন্টু মিয়ার মিলের কোনো শেষ নেই। অনেক যমজ রয়েছে, তবে এতটা মিল কোথাও দেখা যায় না। তাঁদের বাবা বিশারত আলী অনেক আগে মারা গেছেন। মা রাহেলা খাতুন বেঁচে আছেন। তাঁরা তিন বোন আর দুই ভাই। ঠান্ডু মিয়ার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। মন্টু মিয়া তিন মেয়ের বাবা। ঠান্ডু মিয়া বলেন, বাবা ১৯৬৭ সালে দুই ভাইকে কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এরপর তাঁরা প্রতি শ্রেপণিতে এক সেট বই কিনে পড়ালেখা করেছেন। এভাবে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। এরপর ১৯৭২ সালে বেড়বাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিদ্যালয়টি তখন নিম্নমাধ্যমিক ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি বার্ষিক পরীক্ষায় দুই ভাই একই নম্বর পান। এরপর বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক (বর্তমান ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান) আবদুর রশীদ তাঁদের দুজনকে অফিস কক্ষে ডেকে আনেন। এরপর দুজনের সম্মতিতে প্রধান শিক্ষক ছোট ভাইকে প্রথম ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে আব্দুর রশীদ বলেন, দুজন একই নম্বর পাওয়ায় তাঁকে এটা করতে হয়েছিল। তাঁরা দুই ভাই খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করেন ঠান্ডু ও মন্টু মিয়া। সেখানেও তাঁদের দুজনের প্রাপ্ত নম্বর ছিল একই। ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ১৯৭৯ সালে। এরপর তাঁরা একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। মন্টু মিয়া বলেন, পড়ালেখা শেষে তাঁরা চার বছর বাড়িতে কৃষিকাজ করেছেন। এরপর ১৯৮৬ সালে দুজনই একসঙ্গে পরিসংখ্যান অধিদপ্তরে চাকরির আবেদন করেন। ঢাকায় মৌখিক পরীক্ষার সময় ঠান্ডু পরীক্ষাকক্ষে প্রথম প্রবেশ করেন। তিনি বেরিয়ে এলে ভেতরে যান মন্টু। তাঁকে দেখে উপস্থিত কর্মকর্তারা বিস্মিত হয়ে জানতে চান, ‘এইমাত্রই তো সাক্ষাৎকার দিয়ে গেলেন, আবার কেন এসেছেন?’ মন্টু বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন। এরপর একই চিঠিতে ১৬ জনকে চাকরিতে যোগ দিতে বলা হয়, যাঁদের মধ্যে তাঁরা দুভাই ছিলেন। ওই বছরের ৮ এপ্রিল ঢাকায় একসঙ্গে চাকরিতে যোগ দেন ঠান্ডু ও মন্টু। চাকরিজীবনে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাটিয়েছেন দুই ভাই। অবসর গ্রহনের আগে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু অফিস থেকে ২০২০ সালের ২ ফেব্রয়ারি সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা একসঙ্গে চাকরী জীবন শেষ করেন। বর্তমানে বাড়ির সঙ্গে থাকা ৬০ শতক জমিতে পার্ক গড়ে তুলেছেন ঠান্ডু আর মন্টু মিয়া। যেখানে গাছের পরিচর্যা করে সময় কাটে তাঁদের। এই যমজ দুই ভাই বলেন, এক জীবনে একে অপরের সঙ্গ ছাড়েননি। অনেক সময় দুই ভাইকে গুলিয়ে ফেলেছেন অনেকে। এ কারণে জীবনে অনেক মজার ঘটনা ঘটেছে। কেউ জানতে চাইলে জীবনের এসব ঘটনার স্মৃতিচারণার ঝাঁপি খুলে বসেন তাঁরা।

 

 

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 10773
  • Total Visits: 1282841
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২১শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১১:১৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018